WB Teachers Protest: সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের জেরে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক সমাজে নেমে এসেছে প্রবল উদ্বেগের ছায়া। ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর রায় অনুযায়ী, যেসব শিক্ষকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২৭ জুলাই ২০১১-এর আগে প্রকাশিত হয়েছিল, তাঁদের আগামী দুই বছরের মধ্যে টেট (Teacher Eligibility Test) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এই নির্দেশ কার্যকর হলে চাকরি হারানোর আশঙ্কায় রয়েছেন হাজারো শিক্ষক। ফলে, আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি এবার রাজপথেও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিক্ষক সংগঠনগুলি।
সংকটের সূচনা: সুপ্রিম কোর্টের ঐতিহাসিক রায়
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ থেকে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে প্রাক-২০১১ নিয়োগপ্রাপ্ত সকল শিক্ষকদের টেট পরীক্ষায় পাশ করা বাধ্যতামূলক। এই রায়ে বহু অভিজ্ঞ শিক্ষক, যাঁরা ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত, তাঁরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। তাঁদের মতে, এই রায় কেবল তাঁদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতার অবমূল্যায়ন নয়, এটি এক ধরনের অবিচারও বটে।
প্রতিবাদের ঝড়: পথে নামছেন শিক্ষক সমাজ
এই রায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষক সংগঠনগুলি ইতিমধ্যেই আইনি ও গণআন্দোলন দুই দিকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এবং উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (UUPTWA)-এর পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিভিউ পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। সংগঠনের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ জানান, শিক্ষকদের পক্ষে সওয়াল করার জন্য বিশিষ্ট আইনজীবী গোপাল সুব্রহ্মণ্যম-কে নিযুক্ত করা হয়েছে।
শুধু আদালতের ভরসায় না থেকে, শিক্ষক সমাজ এবার রাজপথে নামছে। তাদের লক্ষ্য স্পষ্ট – আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।
আন্দোলনের তারিখ, স্থান ও কর্মসূচি
- তারিখ: ১৫ই অক্টোবর, ২০২৫
- স্থান: রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, কলকাতা
- সময়: বেলা ১২টা
এই বিশাল প্রতিবাদ মিছিল রানী রাসমণি রোড পর্যন্ত যাবে। এরপর দুটি প্রতিনিধি দল রাজ্যপাল এবং প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কাছে ডেপুটেশন জমা দেবে। ভাস্কর ঘোষের ভাষায়, “আজ থেকে শুরু হচ্ছে রাস্তায় আন্দোলন। যদি আইনি পথে সুরাহা না হয়, তবে সংসদকে আইন সংশোধন করতে বাধ্য করতে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”
শিক্ষকদের প্রধান দাবিগুলি
শিক্ষক সংগঠনগুলির আন্দোলন মূলত তিনটি বড় দাবিকে ঘিরে আবর্তিত হচ্ছে:
১. রেট্রোস্পেক্টিভ এফেক্ট বাতিল
২০১১ সালের আগে প্রণীত নিয়মের ভিত্তিতে বর্তমানের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে না। অতীতে গৃহীত নিয়ম বর্তমান চাকরিতে প্রভাব ফেলবে না।
২. অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি
দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করা অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পেশাগত অভিজ্ঞতাকে যথাযথ মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি দিতে হবে।
৩. RTE আইনের সংশোধন
Right to Education (RTE) আইনে প্রয়োজনে সংশোধন এনে শিক্ষকদের চাকরি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
ভবিষ্যতের পথ: আরও বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি
শিক্ষক সংগঠনগুলি স্পষ্ট জানিয়েছে যে, এই আন্দোলন কেবল শুরু। আইনি লড়াইয়ে সাফল্য না এলে তারা দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তুলবে। তাদের লক্ষ্য একটাই – সংসদে আইন সংশোধনের মাধ্যমে শিক্ষকদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করা।
রাজ্যের প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষকরা ইতিমধ্যেই ঐক্যবদ্ধভাবে এই লড়াইয়ে সামিল হচ্ছেন। তাঁদের মতে, এটি শুধুমাত্র চাকরি রক্ষার লড়াই নয়, এটি শিক্ষার মর্যাদা ও অভিজ্ঞতার সম্মান রক্ষার সংগ্রামও বটে।