SSC 10 Marks: চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর বিতর্কে হাইকোর্টের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ

WB TEAM

SSC 10 Marks

SSC 10 Marks: পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) দ্বিতীয় এসএলএসটি (SLST) শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় পার্ট-টাইম বা চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর দেওয়া হবে কিনা, তা নিয়ে দায়ের হওয়া মামলায় নতুন মোড় এসেছে। কলকাতা হাইকোর্ট এই বিষয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন নির্দেশ জারি করেছে, যা রাজ্যের অসংখ্য চাকরিপ্রার্থীর মধ্যে আলোচনার সৃষ্টি করেছে। আদালত এই বিতর্কিত বিষয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) এবং সংশ্লিষ্ট জেলা স্কুল পরিদর্শকদের (DI) কাছে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করেছে।

আবেদনকারীদের মূল দাবি

এই মামলার আবেদনকারীরা মূলত সেই সমস্ত শিক্ষক, যারা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে পার্ট-টাইম বা চুক্তিভিত্তিক (Contractual) পদে কর্মরত। তাদের দাবি, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তাদের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাকে স্বীকৃতি দিয়ে অতিরিক্ত ১০ নম্বর ‘অভিজ্ঞতার নম্বর’ (Teaching Experience Marks) প্রদান করা উচিত।

অভিজ্ঞতার গুরুত্ব

আবেদনকারীদের আইনজীবীদের যুক্তি অনুযায়ী, এই শিক্ষকদের মধ্যে অনেকেই ১০-১২ বছর ধরে শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত রয়েছেন। তারা মনে করেন, এই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা তাদের যোগ্যতা ও দক্ষতার প্রমাণ, যা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় উপযুক্তভাবে প্রতিফলিত হওয়া উচিত।

ফর্ম পূরণের জটিলতা

আবেদনকারীরা জানান, অনলাইনে আবেদন করার সময় তারা টিচিং এক্সপেরিয়েন্স বা টিচার কোড ইনপুট করার সুযোগ পাননি। এর ফলে তাদের অভিজ্ঞতা সঠিকভাবে সিস্টেমে প্রতিফলিত হয়নি।

“জোন অফ কনসিডারেশন”-এর আশঙ্কা

আবেদনকারীদের আশঙ্কা, যদি অভিজ্ঞতার জন্য ১০ নম্বর না দেওয়া হয়, তাহলে তারা “জোন অফ কনসিডারেশন” থেকে বাদ পড়বেন। অর্থাৎ, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তারা মেধা তালিকার বাইরে চলে যেতে পারেন।

কমিশনের জোরালো আপত্তি

অন্যদিকে, স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) পক্ষ থেকে এই দাবির কঠোর বিরোধিতা করা হয়েছে। কমিশনের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আদালতে জানান, আবেদনকারীরা যে পদে কর্মরত, তা কোনও “সাবস্ট্যান্টিভ পোস্ট” (Substantive Post) নয়, অর্থাৎ এটি প্রকৃত স্থায়ী পদ নয়।

কমিশনের যুক্তি অনুযায়ী, যেহেতু চুক্তিভিত্তিক পদগুলি স্থায়ী নয়, তাই নিয়ম অনুযায়ী এই প্রার্থীরা অভিজ্ঞতার নম্বর পাওয়ার যোগ্য নন। এছাড়াও, কমিশনের দাবি, আবেদনকারীরা এই অভিযোগ নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে দেরি করেছেন, যা এই মামলাকে “বিলেটেড স্টেজ”-এ নিয়ে এসেছে।

হাইকোর্টের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ

দু’পক্ষের যুক্তি শোনার পর বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের বেঞ্চ মামলাটিকে একটি “বিতর্কিত ইস্যু” (Disputed Issue) হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও আদালত এখনই কোনও চূড়ান্ত রায় দেয়নি, তবে বিষয়টির গভীরে যাওয়ার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ জারি করেছে।

রিপোর্ট তলব

আদালত পশ্চিমবঙ্গ সেন্ট্রাল স্কুল সার্ভিস কমিশন (WBCSSC) এবং সংশ্লিষ্ট জেলা স্কুল পরিদর্শকদের (DI) ৭ দিনের মধ্যে হলফনামা (Affidavit) আকারে বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে।

‘লিভ’ মঞ্জুর

আবেদনকারীরা যেহেতু মামলায় জেলা স্কুল পরিদর্শকদের (DI) সরাসরি পক্ষভুক্ত করেননি, আদালত তাদের ‘লিভ’ (Leave) মঞ্জুর করেছে। এর ফলে আবেদনকারীরা এখন ডিআই-দের আনুষ্ঠানিকভাবে মামলায় যুক্ত করতে পারবেন।

নিয়মিত শুনানি

মামলাটি বিচারপতি ভট্টাচার্যের বেঞ্চে নিয়মিত শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পরবর্তী শুনানির আগে কমিশন ও ডিআই-দের রিপোর্ট জমা পড়লে মামলার পরবর্তী দিকনির্দেশ নির্ধারিত হবে।

পরবর্তী পদক্ষেপ ও প্রভাব

আদালতের এই নির্দেশের পর এখন বল কার্যত কমিশন ও জেলা পরিদর্শকদের কোর্টে। তাদের রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করছে মামলার ভবিষ্যৎ। যদি শেষ পর্যন্ত আদালত আবেদনকারীদের পক্ষে রায় দেয় এবং তারা অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর পান, তবে তা রাজ্যের হাজার হাজার পার্ট-টাইম ও চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকের জন্য একটি বড় জয় হবে।

অন্যদিকে, এই রায়ের ফলে ২য় এসএলএসটি-র মেধা তালিকায় বড়সড় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা নতুন বা ফ্রেশার প্রার্থীদের অবস্থানেও প্রভাব ফেলতে পারে। তাই রাজ্যের শিক্ষক প্রার্থীরা এখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য।

শেষ কথা

চুক্তিভিত্তিক শিক্ষকদের অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি নিয়ে এই মামলাটি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে উঠেছে। আদালতের আসন্ন রায় শুধু প্রার্থীদের নয়, গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়ার ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ওপরও গভীর প্রভাব ফেলবে।

Leave a Comment