Primary Recruitment 2025: কলকাতা হাইকোর্টে আজ অনুষ্ঠিত হলো প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রশ্নভুল মামলার গুরুত্বপূর্ণ শুনানি। বিচারপতি শম্পা দত্ত পালের বেঞ্চে এই মামলাটি ওঠে। ২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নভুলের কারণে অল্প কিছু নম্বরের জন্য উত্তীর্ণ হতে না পারা প্রার্থীরা এই মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁদের ভাগ্য এখন আদালতের পরবর্তী রায়ের ওপর নির্ভর করছে।
প্রাথমিক নিয়োগ মামলার প্রেক্ষাপট
২০২২ সালের প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কিছু প্রশ্ন ভুল ছিল বলে অভিযোগ ওঠে। বহু পরীক্ষার্থী দাবি করেন, প্রশ্নপত্রের ভুলের কারণে তাঁরা ন্যায্য নম্বর থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং চূড়ান্ত মেরিট লিস্টে নাম ওঠেনি। এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা আদালতের শরণাপন্ন হন।
আদালত পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদকে একটি বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। তবে এখনও পর্যন্ত সেই রিপোর্ট আদালতে জমা পড়েনি। এরই মধ্যে রাজ্য সরকার ১৩,৪২১টি শূন্যপদে নতুন নিয়োগের ঘোষণা দেয়, যা মামলার গতিপথকে আরও জটিল করে তোলে।
আজকের শুনানিতে কী ঘটল?
আজ আদালতে মূলত ইরিন তাবাসুম এবং অন্যান্যদের দায়ের করা WPA 23757/2025 মামলাটির ওপর শুনানি হয়। মামলাকারীদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে পর্ষদ যেন রিপোর্ট জমা দেয় এবং প্রশ্নভুলের কারণে বঞ্চিত প্রার্থীদের নিয়োগে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয়।
পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, এখনও পর্যন্ত নতুন নিয়োগের জন্য কোনও আবেদন প্রক্রিয়া বা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি, শুধুমাত্র শূন্যপদের ঘোষণা করা হয়েছে। এই বক্তব্যের ভিত্তিতে আদালত কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ করে।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ
- “আবেদন শুরু হলে আদালত বিষয়টি দেখবে”: আদালত পর্ষদের বক্তব্য মেনে নিয়ে জানিয়েছে যে, নিয়োগের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হলে আদালত বিষয়টি পুনরায় বিবেচনা করবে।
- “Liberty to File”: বিচারপতি মামলাকারীদের নতুন করে মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন। অর্থাৎ, যদি পর্ষদ রিপোর্ট জমা না দিয়েই আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করে, তাহলে প্রার্থীরা পুনরায় আদালতের দ্বারস্থ হতে পারবেন।
এই রায়ের প্রভাব প্রার্থীদের ওপর
হাইকোর্টের এই পর্যবেক্ষণের ফলে প্রশ্নভুল মামলার সঙ্গে যুক্ত প্রার্থীদের মধ্যে নতুন করে আশা দেখা দিয়েছে। নিচে এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
১. আইনি সুরক্ষা
আদালতের এই সিদ্ধান্ত প্রার্থীদের আইনি সুরক্ষা দিচ্ছে। এর ফলে পর্ষদ নিজের মতো করে নিয়োগ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে পারবে না। আদালতের নির্দেশের বাইরে গিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
২. রিপোর্ট জমা দেওয়ার সম্ভাবনা
এই রায়ের পর পর্ষদের ওপর রিপোর্ট জমা দেওয়ার চাপ বেড়েছে। আদালতের পরবর্তী শুনানিতে বিষয়টি আরও গুরুত্ব পেতে পারে, যা প্রার্থীদের জন্য ইতিবাচক দিক।
৩. নিয়োগে অংশগ্রহণের সুযোগ
যদি আদালতে জমা পড়া রিপোর্ট প্রার্থীদের পক্ষে যায়, তাহলে তাঁরা নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেতে পারেন। এটি তাঁদের দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে পারে।
বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশ
বর্তমানে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, প্রার্থীদের নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও পর্ষদের পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। ছুটির পর আদালতের বাকি মামলাগুলির শুনানি হলে পরিস্থিতি আরও স্পষ্ট হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপসংহার
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের এই মামলাটি রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের পর্যবেক্ষণ চাকরিপ্রার্থীদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, পর্ষদ কত দ্রুত রিপোর্ট জমা দেয় এবং রাজ্য সরকার এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয়। প্রার্থীরা আশা করছেন, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর এবার ন্যায়বিচার মিলবে।