নবদ্বীপে ভোটার তালিকা পরীক্ষা করার সময় দেখা গেছে, অন্তত ৬৫ জন ভোটারের বাবা-আবিভাবকের নাম হিসেবে একই ব্যক্তির নাম নথিভুক্ত — জয়পতাকাস্বামী দাস। বিষয়টি সামনে আসলে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে প্রশ্ন জড়ায়। ইসকন বা মায়াপুরের পক্ষ থেকে এর ধর্মীয় কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে।
সংক্ষিপ্ত সারসংক্ষেপ
ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় নবদ্বীপ কেন্দ্রের নির্দিষ্ট বুথে দেখা গেছে অনেক ভোটারের অভিভাবকের নামের স্থলে ‘গুরু মহারাজ’ বা জয়পতাকাস্বামী দাস লেখা আছে। ইসকন বলেছে—হাজার বছরের ধর্মীয় প্রথার কারণে ভক্তরা গুরুকে ‘পিতা’ হিসেবে দেখেন, তাই তাই পরিচয়পত্রেও Gurudev-এর নাম এসেছে। নির্বাচন কর্মকর্তা বলেছেন, বিষয়টি শুনানি করবে এবং আপাতত ভক্তদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়ার আশঙ্কা নেই।
কি ঘটেছে — সরল ভাষায়
- নবদ্বীপে ভোটার তালিকা দেখলে কর্তৃপক্ষ চিন্তিত হয়েছেন — একই বাবার নাম বহু ভোটারদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
- তথ্য অনুযায়ী বেশিরভাগ ভক্ত ২০০২ সালের তালিকা তৈরি করার সময় সেইভাবে ‘গুরু’ বা ‘গুরু মহারাজ’কে অভিভাবক হিসেবে লিখেছেন।
- ইসকন বলেছে — সন্ন্যাসগ্রহণের পরে ভক্তরা সংসার ছেড়ে অনুরাগী হয় এবং গুরুদেরকে অভিভাবক মনে করে। এটাকে তারা ‘ধর্মীয় প্রথা’ বলে ব্যাখ্যা করেছে।
- নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে—ভোটার তালিকায় সম্পর্কের জায়গায় যেকোনো নাম লেখা যেতে পারে; বিষয়টি শোনানির মধ্যে পড়বে।
ইসকনের ব্যাখ্যা
ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক বলেছেন, সন্ন্যাসী গুরুদের বহু ভক্ত তাদের পরিবারের কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়ে আধ্যাত্মিক জীবন গ্রহণ করে। সেক্ষেত্রে ভক্তরা গুরু মহারাজকেই তাঁদের পিতৃস্থানীয় অভিভাবক মনে করেন। তাই পরিচয়পত্রে ‘পিতা’ হিসেবে তাঁর নাম লেখা থাকা ধর্মীয় রীতির অংশ—এটি ভুল নয় বরং প্রথাগত আচরণ, তাদের দাবি।
নির্বাচন কমিশনের অবস্থান
নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক জানিয়েছেন যে ভোটার তালিকায় ‘সম্পর্ক’ লেখার ক্ষেত্রে নির্বাচনী নিয়ম কিছুটা নমনীয়। তবে যেহেতু একাধিক ভোটারের অভিভাবকের নাম এক হলে প্রশাসনিক ও স্বচ্ছতা সংক্রান্ত প্রশ্ন উঠতে পারে, সেক্ষেত্রে শুনানি বা যাচাই-বাছাই হবে। আপাতত কোন ভোটার বাদ পড়ার আশঙ্কা নেই বলে জানানো হয়েছে।
সরলার্থে
সংক্ষেপে — অনেক ভক্ত তাদের পরিচয়ে ‘গুরু’কে পিতারূপে দেখায়, ফলে তালিকায় গুরুদের নাম উঠেছে। প্রশাসন সেটা দেখে নিশ্চিত করবে যে কোনো ভদ্র প্রশ্ন নেই ও ভোটাধিকার সঠিকভাবে বজায় আছে কিনা।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনা নিয়ে নদিয়ার রাজনীতিতে তীব্র আলোচনা শুরু হয়েছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন—একই অভিভাবকের নাম বহু ভোটারের ক্ষেত্রে কি তা গণতান্ত্রিক ও প্রশাসনিকভাবে গ্রহণযোগ্য? শাসকদল বলছে—এই বিষয়টি কমিশন দেখবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। সমাজে কিছু মানুষ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে গুরুত্ব দিয়ে দেখলেও প্রশাসনিক স্বচ্ছতার দিক থেকেও প্রশ্ন উঠতে পারে।
মুখ্য নোট: ভোটার তালিকা একটি সংবেদনশীল প্রশাসনিক দলিল — এটি সম্পূর্ণ সঠিক ও যাচাইযোগ্য হওয়া জরুরি। ধর্মীয় বিশ্বাস থাকলেও জাতীয় নির্বাচনী প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা বজায় রাখাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
পাঠকের জন্য সহজ প্রশ্ন ও উত্তর
১) এমন নাম থাকলে কি ভোটারদের ভোট ব্যাহত হবে?
এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন বলেছে—শুনানি করা হবে, কিন্তু আপাতত ভক্তদের নাম বাদ দেওয়ার সরাসরি সিদ্ধান্ত নেই।
২) কারও নাম পরিবর্তন বা সংশোধন করা যাবে কি?
হ্যাঁ — ভোটার তালিকা সংশোধন বা আপডেট করার নিয়ম আছে। যদি কেউ প্রকৃত পিতা-মাতার নাম না দেখাতে চান বা ভুল থাকে, তারা সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারেন।
৩) এটা কতটা সাধারণ?
এ ধরনের ঘটনা বিরল হলেও ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে কিছু ক্ষেত্রে দেখা যেতে পারে—বিশেষত যেখানে ভক্তরা গুরুকে পারিবারিক ভূমিকা দেন। প্রশাসনিক দৃষ্টিতে তবে এটি যাচাইয়ের বিষয়।
উপসংহার
নবদ্বীপে একই ব্যক্তিকে ৬৫ জনের অভিভাবক হিসেবে দেখানো নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে — এটি ধর্মীয় প্রথারই প্রতিফলন বা ডাটার ত্রুটি—দুটি ক্ষেত্রেই নির্বাচনী কর্তৃপক্ষের যাচাই দরকার। নির্বাচন কমিশন শিগগিরই বিষয়টি শুনানি করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে। নাগরিক ও ভোটার হিসেবে প্রত্যেকের দায়িত্ব যে তথ্য সঠিকভাবে নথিভুক্ত হচ্ছে তা নিশ্চিত করা—এটাই সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।









